Wednesday, 21 February 2018

পরিপূর্ণতা


কলেজে পড়াকালীন কৌশিকের একটা মেয়েকে দেখে খুব পছন্দ হয় .কিন্তু কথা বলা বন্ধ হওয়ার ভয়ে বলে উঠতে পারেনি  কখনো.. বন্ধুদের মাধ্যমে  মেয়েটা  একটু  আধটু  আন্দাজ  করতে পারতো অবশ্য  কিন্তু  নিশ্চিত হতে পারেনি কখনো.  মেয়েটাকে দেখতেও  যে খুব একটা ভালো  ছিল তা না. সারা মুখে ব্রণ, না কোনো স্টাইল জানে, সব সময় একটা  ছেলে ছেলে ভাব.. ছেলেদর  সাথেই  ওঠাবসা ... কিন্তু মেয়েটার এই সব জিনিসগুলোই কৌশিকের মনটা ছুঁয়ে যেত....হোক নাঃ টম বয়, স্টাইল না জানা.......এত ভালো মনের সৎ মেয়ে তাও আবার এখনকার দিনে কতজন্ম তপস্যা করলে পাবে কে জানে???
দিয়া মাঝে মাঝে  কল্পনা করতো সত্যি হয়তো কোনোদিনও কোনো এক রাজপুত্তর আসবে ওকে নিয়ে যাবে দূরে কোনো এক স্বপ্নের দেশে.  কিন্তু পরক্ষনেই নিজেকে বোঝাতো BE PRACTICAL.....কারণ  সে ইতিমধ্যেই প্রত্যাখিত হয়েছে তার ছোটবেলাকার বন্ধু অর্জুনের কাছ থেকে...কারণটা ছিল তার গায়ের রং .... স্টাইল না জানা ....আর অভাগা ব্রণগুলো .....খুব নিরুপায় মনে করত নিজেকে দিয়া... .মনেমনে নিজেকে শেষ করে ফেলার কত  কল্পনাই না সে করেছে....কত চেষ্টা করে বাকিদের মতো সুন্দর এবং সেক্সি হওয়ার ....শালা !! গায়ের রং আর মুখের ব্রণগুলোর  কিছুতেই  কিছু  হয়না ........তাই  সে  পালতে  চেয়েছিলো সব  কিছু থেকে. যেখানে অর্জুনের কোনো চিহ্নই থাকবে না...যত দূরে যাবে তত পুরোনো স্মৃতিগুলোকে ভুলতে সুবিধা হবে....মাঝখান থেকে এই কৌশিক যে কোথা থেকে এলো কে জানে ??.....কলেজে এই সবে  প্রথম বর্ষ এখনো চার বছর কাটাতে হবে ..পালানোর জায়গা নেই আর তাছাড়া বাড়িতেই বা কি বলবে ?? তার থেকে ভালো ওই সব বাজে দিকে মাথা না দিয়ে যেমন আছে তেমন ভাবে  থাকা...যদি সত্যিই কৌশিকের মনে কিছু থাকে তো করুক না প্রপোজ  কি না করে দেবে??? দিয়া জানে রিজেক্ট হবার কষ্টটা .... পারবেনা কৌশিকে সেই কষ্টটা দিতে কারণ সর্বোপরি কৌশিক ছেলেটা বেশ ভালো. সবসময়  ক্রিকেট  ফুটবল  আর  নিজের  বন্ধুদের সাথে হৈহুল্লোরে  করে  কাটিয়ে দেয়  বেশ সৎ,হেল্পফুল,দায়িত্ববান আর বেশ সংবেদনশীল............


দেখতে দেখতে চারবছর কেটে গেলো ....আজ কলেজের শেষ দিন...সবাই সবার জামাতে অটোগ্রাফ নিচ্ছে আর দিচ্ছে স্মৃতি হিসাবে ......হটাৎই কৌশিক দিয়াকে বললো কিরে তুই আমার  অটোগ্রাফ নিবি নাঃ??? দিয়া বললো কেন নেবো না রে ???? দে  দে তোর অটোগ্রাফটা দে দিকি ..দেখিস ভালো করে দিস !! বাড়িতে সবাইকে দেখাবো....আর তোর বিয়ের পর তোর বউকেও দেখাবো .......বলেই জোরে জোরে হেসে উঠলো দিয়া ....আরো অনেক জায়গায় অটোগ্রাফ দেওয়ার জায়গা থাকলেও  কৌশিকের দিয়ার সালোয়ারের নিচের অংশটাই বেশি পছন্দ হলো. 
দিয়ার সামনে হাঁটু  গেড়ে বসে লিখতে লাগলো..দিয়ার তখন ওর বন্ধুদের সাথে গল্পে মশগুল ....কৌশিকের দিকে খেয়ালই নেই ....কৌশিক আড়চোখে চোখে আজ দিয়াকে ভালো করে দেখে নিলো  কে জানে আদৌ আর কোনোদিনও দেখতে পাবে কি না !! অটোগ্রাফ  দিয়ে  উঠে দিয়াকে বললো কিরে  পাগলী  এবার তোর পালা.......দিয়া এতক্ষনে খেয়াল করলো কৌশিকে ...বেশ ভালোমতো বুঝতে পারলো আর বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকলেই  আর নিজেকে সামলাতে পারবে না তাই অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দিয়া এতক্ষন কৌশিকে উপেক্ষা করার চেষ্টা করছিলো..... কৌশিকের  জামার আর  কোনো অংশ খালি নেই ..... শুধু বুকের কাছের জামাটা একটু খালি  আছে ......দিয়া ওখানেই  লিখতে যাচ্ছিলো ...হটাৎ দিয়ার একটা বন্ধু শালিনী এলো দিয়ার  জামাতে লিখবে বলে।   লিখতে গিয়ে শালিনীর হটাৎ চোখে পড়লো  এক জায়গায় ভীষণ ছোট ছোট করে লেখা আছে  .......""" thank you for being there.......তুই না থাকলে আজ আমি নিজেকে খুঁজেই পেতাম না .......আজ আমি যা সব তোর জন্য .....জানিনা  আবার  কবে  এই  উসখো খুস্কো  চুলগুলোকে  দেখতে  পাবো .....যেমন  আছিস  তেমনি  থাক.  নিজেকে  কখনো  পাল্টে ফেলিস না.  তোর এই ব্রণগুলোকে আমি খুব ভালো বসে ফেলেছি রে .....ওই টম বয় !! তোর নীল আর হলুদের টি -শার্টটা আমাকে একবার দিবি রে আমি একদিন পরে ফেসবুকে ছবি দেবো...শালা চরম  দেখতে রে ...."""----ইতি কৌশিক ... শালিনীর চোখে হাই পাওয়ার থাকার দরুন খুব একটা ভালো ভাবে পড়তে না  পারলেও বিন্দুমাত্র বুঝতে অসুবিধা হলো না কৌশিকের মনের কথাগুলো  ......লেখাটা পরে শালিনী দিয়াকে দেখলো মেয়েটা সত্যি !! কিছুই জানে না যে কেও ওকে এত ভালো  বাসতে পারে .....এই দিয়া তুই এই লেখাটা পড়েছিস??? কৌশিক  যেটা  লিখেছে....."নাঃ তো !!"....শালিনী কৌশিককে  বললো "ওই তুই একবার পরে শোনা না রে দিয়ার জামাতে কি লিখেছিস? আমি ঠিক করে পড়তে পারলাম না চোখে পাওয়ারের জন্য আর তারওপর যা  ছোট  ছোট  করে  লিখেছিস কিন্তু দেখে লাগছে  বেশ সুন্দর কিছু একটা লিখেছিস" ...কৌশিকের চোখ মুখে ভয় আর লজ্জার একটা সম্মৃসণ...শালিনীর জোড়াজুড়ীতে অগত্যা পরে  শোনাতেই হলো কৌশিকে শুনতে  শুনতে দিয়া নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছে না যে গায়ের  রং মুখের ব্রণ আর আনস্মার্টের জন্য নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথা  ভাবতো  আজ সেগুলোই অন্যের কাছে ভালোবাসার কারণ হয়ে গেছে ...কখন অজান্তে চোখের জল  গাল বেয়ে পড়তে শুরু করেছে দিয়া নিজেই জানে না .....সম্বিৎ  ফিরলো বাকিদের হাততালি আর অভিনন্দনের আওয়াজে .....তাকিয়ে দেখলো চারপাশ কিছুই সে দেখতে পাচ্ছে না  ঠিক  করে .....চোখ দিয়ে অনবরত জল পরেই যাচ্ছে .....শুধু একটা  মুখ দেখলো কেমন ভয় ভয় দিয়ার দিকে চেয়ে আছে .....


আজ দশ বছর বাদে  আলমারিটা  খুলে  হটাৎই সামনে  সাজানো  ২টো  জামা  দেখে  দিয়ার চোখ  দিয়ে আবার জল গড়িয়ে পড়লো .....পিছন থেকে হটাৎ দুটো হাত ওকে জড়িয়ে ধরলো একদম শক্ত করে .......এই গায়ের গন্ধটা দিয়া চেনে....ততক্ষনে দিয়া আর কৌশিক মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কৌশিকের সিক্ত ঠোঁট যুগল দিয়ার কপালকে আরো একবার স্পর্শ করলো ঠিক যেমন দশ বছর আগে করেছিল কলেজে  সবার  সামনে. আলমারির আয়নাতে দিয়ার হটাৎই একবার চোখ যাওয়াতে খেয়াল করলো মাথার লাল রেখাটা  আগের চেয়েও আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে ...


কলমে
দ্যুতিপ্রিয়া

বিচ্ছেদের যন্ত্রণা এক সময় শুধুই স্মৃতি হয়ে যায়,..... এক সাথে‌ কাটানো মূহুর্ত গুলো খেই হারিয়ে ফেলে কিছু ভুল বোঝাবুঝির ভিড়ে,, এক স...